বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১১

স্বাধীনতার 40 বৎসর এবং আগামী 40 বৎসর পরে বাংলাদেশ

আজ থেকে 40 বৎসর আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর চীফ জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় সেনা বাহিনীর চীফ জেনারেল আরোরা এর নিকট আত্বসমর্পন করার মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জম্ন হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতই আমাদের একমাত্র বন্ধু ছিল যে, সর্বদিক থেকে আমাদের কে সাহায্য সহযোগীতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে সাহায্য করেছিল। 40 বৎসর আগে আমি দুনিয়াতে আসি নাই তাই তখনকার কোন কিছুই আমার দেখা নয়। ইতিহাসের পাতা থেকে পড়ে যা বুঝতে পারি সে টুকুই। আর তখনকার সময়ের কোন লোক থেকে যা শোনা। এই সম্পর্কে লেখা শুরু করলে হয়ত শেষ হতে চাইবে না। তাই আমি বিস্তারিত বিষয়ে না গিয়ে শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত আকারে স্বাধীনতার 40 বৎসর পরের আজকের এই বাংলাদেশ এবং আগামী 40 বৎসর পরের বাংলাদেশ এর মাঝখানে দাড়িয়ে আপনাদের সাথে কিছু শেয়ার করতে যাচ্ছি।

স্বাধীনতার 40 বৎসর পার হয়ে গেলেও আজ ও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে পারছি না। স্বাধীন ভাবে আকাশে পাখা মেলে উড়ে বেড়ানো একটি পাখির মত আনন্দ করে আমরা কি বাচতে পারছি? উত্তরে হয়ত বেশীরভাগই আমার মত করে বলবেন,  না। অথচ যে সকল ভাই, বাবা, সন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করে দিল যে সকল মা বোনেরা তাদের সম্মান দিল তারা কি আজকের এই দেশ চেয়েছিল? আর যারা সেই বিভীষিকাময় যুদ্ধের ময়দান থেকে আমাদের জন্য স্বাধীনতার সোনালী সূর্য নিয়ে এলো তারা এখন কোথায়। হয়ত বেশীর ভাগই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছে। আর যারা এখন ও বেচে আছে তারা ? অন্তরের মধ্যে ভীষন কষ্ট অনুভব হয় যখন খবরের কাগজে দেখি  কোন মুক্তিযোদ্ধা জীবন চালানোর তাগিদে হয়ত মুটে গিরি করছে বা কারও কাছে ভিক্ষার হাত পাতছে। অথচ আমাদের দেশের সরকার এই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে তাদের দেখভাল করার জন্য একটি মন্ত্রনালয় খুলেছে এবং এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও তাদের সন্তাদের ও সহায্য করছে। 

স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশের কিছু শিল্প কারখানা ছিল যা বিশ্বের বুকে বাংলাকে সম্মানিত করতে এদেশের মসলিন তার উদাহারন। তাছাড়া আদমজী জুট মিলসটি এই সেদিন ও চালু ছিল, খুলনা আঞ্চলের শিল্পগুলির কথাই ধরা যাক, নিউজপ্রিন্ট কারখানা ইত্যাদি। স্বাধীনতার এই 40 বৎসরে এক একে আমরা হারিয়েছি আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প গুলোকে । অথচ শ্রমিক থেকে শুরু করে সবাই দ্বায়িত্ব ছিল এটাকে আরো উৎপাদনশীল করার মাধ্যমে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া। শুধু কি শিল্পে এই অবস্থা? বাংলাদেশ কে আজ কেহ সোনালী আশের দেশ বলে না। চা রপ্তানী করে আর আগের মত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় না। শুধু কি তাই আজ পিয়াজ রসুন থেকে জীবন ধারনের যাবতীয় উপকরণ এর জন্য আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল। ‍খাদ্যদ্রব্যের জন্য ভারত আর জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে চীন এই হলো আমাদের 40 বৎসর পরের অর্জন।

ফিরে আসি বাংলাদেশের স্বাধীনতা‍র সোনালী সৃর্যের উদয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে যখন একমাত্র ভারত ই আমাদের ভরসা। আমাদের কত আপন বন্ধু ভারত। মুলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ভারতছাড়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। সেই ভারত আজ 40 বৎসর পরে বিশ্বের বুকে ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশের জম্নের সময়ে যেভাবে ভারত আমাদের সহযোগীতা করছে, দেশ গড়তে কি পারত না আমাদেরকে সাহায্য করতে। অথচ এমনকি ঘটল মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ফারাক্কা বাধ দিতে হলো। কেন বাংলাদেশ কে প্রাকৃতিক উৎসে থেকে পাওয়া পানি দেওয়া গেল না।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, সুজলা সুফলা সষ্যের দেশ ছিল আমাদের এই বাংলাদেশ। বর্যার মৌসুমে নদীগুলোতে থাকত পানি আর পানি সেই পানি নদী ছাড়িয়ে চলে যেত মাঠে ঘাটে ফলে নদীর পানিতে বয়ে আনা পলি জমা পড়ত আমাদের ক্ষেতখামারে আর এই সকল ক্ষেতে উৎপন্ন হত রবি সষ্য। বাংলাদেশের ভুমি ছিল সব সময় উর্বর। এমন কেন হলো যে ভারত মনে করল বাংলাদেশের জমিতে ফসল উৎপন্ন হতে দেওয়া যাবে না। বাধ দিতে হবে ফারাক্কা। এই ফারাক্কা বাধের কারনে আজ বাংলাদেশ আর নদী মাতৃক দেশ নাই। নদীতে আর পানি আসে না তাই নদীর পলি নদীতেই জমতে জমতে ভরাট হয়ে গেছে। ক্ষেত খামারে আর ফসল উৎপন্ন হয় না। 15/20 বৎসর আগে যে নদীটি ছিল প্রমত্তা যার বুকে ব্রীজ তৈরি করা হয়েছিল। আজ সেই নদীর বুকে গেলে মনে হয় এ কোন পাগলের দেশে এলাম রে বাবা যে খানে রাস্তা তৈরি করা যেত সেখানে এভাবে কেন ব্রীজ দিয়েছে এরা।

ভাবছেন আগামী 40 বৎসর পর এদেশ কি অবস্থায় পতিত হবে? ফারাক্কা বাধের কারনে এই অবস্থা। যদিও একটু আধটু পানি আসছে তিস্তা দিয়ে সেখানেও বাধ দিতে হবে। বিবেকবান মানুষ কি মনে করেন , কেন এটা করতে হবে। এক ফারাক্কা বাধের কারনে আজ বাংলাদেশ মরু ভূমির দেশ হতে চলছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল অল্পকিছুদিনের মধ্যে মরুভূমিতে রুপ নিতে পারে। বিশাল প্রমত্তা পদ্মা যেখানে মরা খাল হবার উপক্রম। সেখানে আবার তিস্তা ব্যারেজ।

1947 সলে যখন ভারত পাকিস্তান ভাগ হয় তখন আমরা পাকিস্তানের একটি অংশ হিসাবে অর্ন্তভুক্তি হলেও মূলত পাকিস্তান আমাদের থেকে অনেক দুরে আমরা ভরত দ্বারা পরিবেষ্টিত এমন ছোট একটি ভূখন্ড যা বিশ্বের মানচিত্রে খালি চোখে দেখা দায়। সেই ভারতের সাহায্যে আমরা পাকিস্তানের থেকে আলাদা হলাম। আর এখন ভারত আমাদের কে এভাবে চেপে ধরছে। এই ভাবে চলতে থাকলে আগামী 40 বৎসর পর বাংলাদেশকে ভারতের কাছে নিজেকে সপে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। এমনিতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই হারে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আর দিনকে দিন আবাদি জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। পানির জন্য হাহাকার লেগে যাবে আগামী 40 বৎসর পর। তখন আমাদের জাতীয় নেতারা কি আর করবে দেশের মানুষকে একটু খাবার জোগানোর চেষ্টায় দেশকে ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের অধিনে সর্মপন করা ছাড়া আর কি করার থাকবে। ভারত কি তাই চচ্ছে কিনা কে জানে?  তখন হয়ত ভারতই চিন্তা করবে কেমন করে আবার বাংলার ভূমিকে তার আগের রুপে ফেরৎ নেওয়া যায়. তখন হয়ত থাকবে না কোন ফারাক্কা বা তিস্তা।